জামায়াত-এনসিপি দ্বন্দ্ব: মতাদর্শিক বিভাজন না কি রাজনৈতিক কৌশল?

জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens Party – NCP) বা এনসিপির দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় একসঙ্গে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করলেও সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে এই দুই দলের মধ্যে অসন্তোষ ও দূরত্ব লক্ষ করা যাচ্ছে।

মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস ও উত্তেজনার সূচনা

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam) এর দুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করেই মূলত এই উত্তেজনার সূচনা। প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে বলেন এবং পাকিস্তানপন্থীদের সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে তিনি কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে স্যাবোটাজের অভিযোগ তোলেন। পরবর্তী স্ট্যাটাসে তিনি সরাসরি শিবির ও জামায়াত সংশ্লিষ্টদের প্রতি কঠোর মন্তব্য করেন, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াত-শিবির।

এনসিপির মধ্যে অস্বস্তি ও বিভ্রান্তি

এনসিপি (NCP)’র সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ (Abdul Hannan Masud) বলেন, এমন বিভাজন জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। এনসিপির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা ইস্যুতে পরিষ্কার রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়, যদিও জামায়াতের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।

আন্দোলনের পটভূমি ও মতবিরোধ

গত সপ্তাহে হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat Abdullah)’র নেতৃত্বে যমুনার সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে শাহবাগ (Shahbagh)ে স্থানান্তরিত হওয়া কর্মসূচিতে ইসলামী ছাত্র শিবির (Islami Chhatra Shibir), ইসলামী আন্দোলন (Islami Andolon)সহ জামায়াত-ঘনিষ্ঠ সংগঠনের উপস্থিতি বাড়ে। সেখানে বিতর্কিত স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় বাধা দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় এনসিপি নেতারা নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

শিবির ও জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

শিবির (Shibir) কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম (Nurul Islam Saddam) মাহফুজের স্ট্যাটাসকে ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’ অর্জনের চেষ্টা বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংগীতে বাধাদান বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যারা করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। জামায়াত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ (Hamidur Rahman Azad) বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজের অবস্থান পক্ষপাতদুষ্ট, যা শপথের পরিপন্থী। তার পদত্যাগ দাবি করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ (Mohiuddin Ahmed) মনে করেন, এই দ্বন্দ্ব কৌশলগতও হতে পারে। আন্দোলনের সফলতার পর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও অবস্থানগত ফারাক থেকেই এই উত্তেজনার উৎপত্তি হতে পারে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজাকারের ভূমিকা নিয়ে দুই দলের ভিন্নমত এই মতবিরোধের প্রধান উৎস।

ঐক্য থাকলেও মতভেদ অব্যাহত

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন (Akhtar Hossain) বলেন, “গণতন্ত্রে মতভেদ থাকবে, কিন্তু তা যেন দেশের স্বার্থে ক্ষতিকর না হয়।” তিনি আরও বলেন, “একাত্তরের প্রশ্নে যেমন আওয়ামী লীগের বয়ান থেকে নিস্তার চাই, তেমনি জামায়াতের অবস্থানও পরিষ্কার হওয়া জরুরি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজাকার ইস্যুতে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যকার দূরত্ব প্রকাশ করাও একটি কৌশল হতে পারে।