শিলংয়ের গেস্ট হাউস থেকে দেশে ফেরা: সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ রহস্য ও রাজনৈতিক প্রতিফলন

২০১৫ সালের মার্চে সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed), বিএনপি (BNP)–র যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ভারতের শিলং (Shillong) শহরে তাঁকে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি স্থানীয় একটি গেস্ট হাউসে অবস্থান করছিলেন। এ ঘটনা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন তোলে।

নিখোঁজের অভিযোগ

২০১৫ সালের ৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে কয়েকজন ‘গোয়েন্দা পরিচয়ে’ ব্যক্তিরা উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যায় বলে তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করেন। পরদিন থেকেই তার কোনো খোঁজ মেলেনি। বিএনপি অভিযোগ করে, এটি ছিল একটি রাজনৈতিক অপহরণ। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে তাকে আটকের কথা অস্বীকার করা হয়।

শিলংয়ে অপ্রত্যাশিত আবির্ভাব

দীর্ঘ ৬২ দিন পর ১১ মে ২০১৫ সালে ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলং–এ রাস্তার পাশে বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘোরাফেরা করার সময় সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে পুলিশ। তার কাছে কোনো বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না। পরে জানা যায়, তিনি একটি গেস্ট হাউস — Sunrise Guest House–এ অবস্থান করছিলেন।

সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড়

তাঁকে গেস্ট হাউসে দেখা যাওয়ার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তিনি লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। সম্প্রতি পিনাকী ভট্টাচার্য (Pinaki Bhattacharya) সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে আবার সেই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন।

মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া

ভারতীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট–এ মামলা দায়ের করে। কয়েক বছর মামলা চলার পর ২০১৮ সালে তাকে অভিযোগমুক্ত ঘোষণা করে মেঘালয়ের আদালত। তবে, দেশে ফেরার আগে তাঁকে আদালতের অনুমতি নিতে হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হয়।

বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তিনি রাজনীতি থেকে অনেকটাই নীরব হয়ে যান। যদিও বিএনপি মাঝে মাঝে তার নিখোঁজ ও ফিরে আসার ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের উদাহরণ’ হিসেবে তুলে ধরে।

নিখোঁজ রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ

সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ‘গুম রাজনীতি’–র আলোচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনাকে enforced disappearance হিসেবে চিহ্নিত করে। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে জাতিসংঘ, এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় স্পষ্টভাবে দুইটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে:

  • বিএনপি ও সমমনা মহল দাবি করে, এটি ছিল একটি নিপীড়নের ঘটনা এবং সরকার-সমর্থিত বাহিনীর মাধ্যমে অপহরণ।
  • সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করে, তিনি নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন।

যাই হোক, এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, নিরাপত্তা কাঠামো এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর প্রশ্ন তোলে।