লালমনিরহাট-২ (Lalmonirhat-2) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী (Social Welfare Minister) নুরুজ্জামান আহম্মেদ (Nuruzzaman Ahmed) ও তার পুত্র রাকিবুজ্জামান আহম্মেদ (Rakibuzzaman Ahmed) একে অন্যের সহযোগী হয়ে গড়ে তুলেছিলেন অপকর্মের সাম্রাজ্য। এলাকায় ভয় ও নির্যাতনের মাধ্যমে একটি ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক (ACC) পৃথক তিনটি মামলা করেছে।
ত্রাসের রাজত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার
বিনা ভোটে এমপি হয়ে নুরুজ্জামান ক্ষমতার শীর্ষে ওঠার পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পরিণত করেন দুর্নীতির আখড়ায়। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, বদলি, প্রকল্প অনুমোদন—সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি ও তার ছেলে। এমনকি সুস্থ মানুষদের অসুস্থ সাজিয়ে চিকিৎসা সহায়তার নামে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, যদি কেউ তাদের অনুগত না হতো, তাকে নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হতো। কালিগঞ্জ উপজেলা, আদিতমারী, রেলস্টেশন এলাকা, বিভিন্ন হাটবাজার ও ইজারা—সবকিছুতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল রাকিবুজ্জামানের।
অঢেল সম্পদ ও অনিয়মের পাহাড়
নুরুজ্জামান আহম্মেদ রাজধানীতে গড়ে তুলেছেন একাধিক ফ্ল্যাট, নাম-বেনামে শত শত একর জমি ও কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালান্স। কালিগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে গড়ে তোলেন অবৈধ ‘টাকার পার্ক’। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসও নির্মিত হয়েছিল রেলের অবৈধ জমিতে, যা পরবর্তীতে রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করে।
গ্রেফতার ও মামলার তথ্য
২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি রংপুর (Rangpur) নগরীর একটি বাসা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন থেকে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। কিন্তু তার পুত্র রাকিবুজ্জামান এখনো পলাতক। পুলিশ জানায়, নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিএমপি (DMP), আরএমপি (RMP) ও কালিগঞ্জ থানা (Kaliganj Thana)সহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে হত্যা মামলাও রয়েছে।
রাজনৈতিক পতন ও দলের অবনতি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতনের পর থেকে দেশজুড়ে একটি রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস ঘটেছে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের মতে, দলীয় নেতাদের দাম্ভিকতা ও দুর্নীতির কারণেই দলের পতন ঘটে। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের এই পরিণতি থেকে অন্য দলগুলোর শিক্ষা নেওয়া উচিত।