বিএনপি (BNP) ডিসেম্বর মাসেই জাতীয় নির্বাচন চায়—এমন অবস্থান থেকে দলটি এখন সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) নয়াপল্টনের একটি সমাবেশে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন করতেই হবে”। এ দাবিতে বিএনপি এখন আলটিমেটামের সুরে কথা বলছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
কেন ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বিএনপি?
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর অনুপস্থিতিতে বিএনপি মনে করছে, ভোট হলে তারাই ক্ষমতায় যাবে। দেরিতে নির্বাচন হলে নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে বলেও দলটির মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যেই দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি অভিযোগে দলটির কিছু নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। দলটি আশঙ্কা করছে, সময় বাড়লে এসব অপরাধ বাড়তে পারে, এতে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা যাবে।
কে কে বিএনপির পাশে নেই?
জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party – NCP) এবং জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)সহ ইসলামপন্থী অনেক দলই ডিসেম্বর নয়, বরং আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় চান নির্বাচন আয়োজনে। এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও বারবার বলেছে, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে হবে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar-uz-Zaman), দেশের সেনাপ্রধানও সেনানিবাসের এক বৈঠকে বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু সরকারের ভেতরে এই মতের একমত না থাকায় টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।
বিএনপির ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
বিএনপি মনে করছে, এনসিপি ও জামায়াতকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে তাদের কোণঠাসা করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে দলটি অভিযোগ করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিএনপি-কে সহযোগিতার বদলে বিরোধী হিসেবে দেখছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব (Asif Mahmud Sajib)কে বিএনপি অনাস্থা জানালেও ইউনূস তাঁর সঙ্গেই বৈঠক করেছেন, যা দলটির নেতাদের মধ্যে অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে।
সরকারের অবস্থান
প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam) জানিয়েছেন, সরকার আগামী ৩০ জুন ২০২৬-এর পর একদিনও ক্ষমতায় থাকবে না। তবে এতে স্পষ্ট হয় যে, ডিসেম্বরেই নির্বাচন সরকার করবে না। মূলত সময় নিয়ে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে সরকার নির্বাচন পেছাতে চায় বলে বিশ্লেষকদের মত।
বিএনপি কি একা হয়ে পড়ছে?
রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বর নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির পাশে উল্লেখযোগ্য দল নেই। বামপন্থি দলগুলো সমর্থন দিলেও তাদের প্রভাব নেই বললেই চলে। জামায়াত ও এনসিপি জুন পর্যন্ত সময় নিয়ে নির্বাচনের পক্ষে।
সরকারকে কতটা চাপে ফেলতে পারবে বিএনপি?
বিএনপি মনে করে, সরকার ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক ভালো নয়, সেখানে তাদের অবস্থান বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তাই সরকার সহযোগিতা না পেলে টিকতে পারবে না—এই বার্তা দিচ্ছে দলটি। আর সে কারণে রোডম্যাপ না পেলে বিএনপি সরকারের প্রতি সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
অবিশ্বাস ও অস্থিরতা
ড. ইউনূস-এর পদত্যাগ ভাবনা, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে রাখার ঘটনায় বিএনপি এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার অংশীজনদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ।