আওয়ামী মন্ত্রীর আশীর্বাদে কাজের ছেলে থেকে কোটিপতি ছায়া-প্রশাসক খাদেমুল

দিনাজপুর (Dinajpur) জেলার খানসামা (Khansama) উপজেলায় আলোচিত একটি নাম খাদেমুল ইসলাম (Khademul Islam)। একসময় গরু-ছাগল চরানো ছেলেটি ক্ষমতাসীন দলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (Abul Hassan Mahmud Ali) এর ছত্রছায়ায় ‘ছায়া-প্রশাসক’ হয়ে ওঠেন এবং গড়ে তোলেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ।

মন্ত্রী পরিবারের গৃহকর্মী থেকে ব্যক্তিগত সহকারী

খাদেমুলের বাড়ি ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের খামার বিষ্ণুগঞ্জ গ্রামে। একসময় তার বাবা দিনমজুর ছিলেন। পরিবারের অভাব দূর করতে তিনি মাহমুদ আলীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে কাজ নেন। সেখানে গরু-ছাগল চরানো, জমিতে সেচ দেওয়া, বাজার করা থেকে শুরু করে মাহমুদ আলীর বাসায় যাতায়াত শুরু হয় তার।

এক পর্যায়ে তাকে ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে নিয়োগ দেন মাহমুদ আলী। এরপর খাদেমুলের ভাগ্য বদলে যায়। শুরু হয় সুপারিশ, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার দখল, মাদক ব্যবসায় কমিশন, চাঁদাবাজি ও দখল কর্মকাণ্ড। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় হয়ে ওঠেন অঘোষিত ক্ষমতাধর ব্যক্তি।

বিলাসবহুল জীবন, সম্পদের পাহাড়

খাদেমুল পিএস হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই নির্মাণ করেন আধুনিক দোতলা বাড়ি। গ্রামে জমি কিনে গড়েন পুকুর, গরু-মহিষের খামার, ক্লিনিকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। উপজেলার পাকেরহাটে ‘বিডি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ক্লিনিকও নির্মাণ করেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ার রয়েছে বলে জানা যায়। তবে গত ৫ আগস্ট তিনি গোপনে খামারটি বিক্রি করে দেন।

বিএনপি ও বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে দমননীতি

বিএনপি (BNP) ও অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন খাদেমুল। স্থানীয় রহিদুল ইসলাম জানান, তার জামিন সংক্রান্ত কাগজ জমা দিতে গেলে ওসি তাকে জানান, ‘খাদেমুলের নির্দেশ আছে, ৫০ হাজার টাকা না দিলে আবার গ্রেপ্তার করা হবে’।

স্থানীয় যুবদল (Jubo Dal) নেতা রাশেদুজ্জামান স্মৃতি (Rasheduzzaman Smriti) খাদেমুলের নামে মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় খাদেমুল ও তার সহযোগীরা চাঁদাবাজি, হুমকি ও হামলার মাধ্যমে টাকা আদায় করেছেন। তিনি জানান, তাকে গুম ও হত্যা হুমকি দেওয়া হয় এবং একবার রাস্তায় কুপিয়ে আহত করা হয়।

প্রশাসনের নিরবতা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা

সরকার পতনের পরও আগের মতোই প্রভাবশালী থেকে গেছেন খাদেমুল। তার নামে মামলা থাকলেও পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করেনি। যুবদল নেতা স্মৃতি জানান, থানায় একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে খানসামা থানার (Khansama Police Station) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজমুল হক (Nazmul Haque) জানান, খাদেমুলের নামে মামলা রয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।