একই দিনে দুই ভিন্ন শহরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করে দুটি পৃথক মামলার জন্ম দিয়েছেন সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ (Saifuddin Muhammad Emdad) নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। এ ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জটিলতা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
চট্টগ্রামে মামলা
চট্টগ্রাম (Chattogram) জেলার সন্দ্বীপ (Sandwip) উপজেলার বাসিন্দা সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ গত বছরের ৪ আগস্ট নিউমার্কেট মোড়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে একটি চোখ হারানোর অভিযোগ তোলেন। এরপর চলতি বছরের ১৭ জুন তিনি খুলশী থানা (Khulshi Police Station)-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সহ ১৬৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রাম এর শিল্পপতি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছেন।
ঢাকায় আরেকটি মামলা
তবে এর তিন মাস আগেই, গত ২০ মার্চ ঢাকা (Dhaka) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এম এ হাশেম রাজু নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন, যাতে দাবি করা হয় যে, সাইফুদ্দীন ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট শাহবাগ (Shahbagh)-এর পরীবাগ (Paribagh) মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন। মামলাটি বর্তমানে শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
এই মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু (MA Hashem Raju), যিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টার (International Human Rights Commission Bangladesh Chapter)-এর প্রেসিডেন্ট এবং ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি, বলেন যে ভিকটিম নিজে তাদের সংস্থার কাছে লিখিতভাবে মামলা করতে আবেদন করেছিলেন। তিনি জানান, “সাইফুদ্দীন আমাদের একটি এফিডেফিট দিয়ে আবেদন করেছিল। পরে আমি বাদী হয়ে মামলা করি।”
বিভ্রান্তির উৎস কোথায়?
চট্টগ্রাম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নিউমার্কেট মোড়ে ‘সরকার পতনের আন্দোলনে’ অংশ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি আহত হন। এরপর ৫ আগস্টও মিছিলে অংশ নেন এবং আবারও গুলিবিদ্ধ হন বলে দাবি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (Chittagong Medical College Hospital)-এ চিকিৎসা নেন এবং ৮ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন।
অন্যদিকে, ঢাকার মামলায় বলা হয়, সেদিন সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল পরীবাগ মোড়ে পৌঁছালে সেখানে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অন্যান্যরা গুলি চালায়, বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে সাইফুদ্দীনের ডান চোখে ছররা গুলি লাগে ও পরে তাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য
খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ আফতাব হোসেন বলেন, তদন্তে যদি মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহবাগ থানার (Shahbagh Police Station) ওসি খালিদ মুনসুর জানান, “মেডিকেল সনদ না পাওয়ায় এখনো প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়নি।”
আদালতের অবস্থান
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মফিজুল হক ভুঁইয়া (Mofizul Haque Bhuiyan) জানান, “এ ধরনের মামলায় আমরা তথ্য যাচাই করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। দুই শতাধিক মামলা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরও কিছু মামলা যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রত্যাহার হতে পারে।”
ভিকটিম সাইফুদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোনে সংযোগে আসেননি।