ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ভারতের সংসদীয় কমিটির বিশেষ বৈঠক

ভারতের পার্লামেন্ট (Indian Parliament)–এর পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটি (Standing Committee on External Affairs) সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে আয়োজিত এই বৈঠকে কমিটির প্রধান শশী থারুর (Shashi Tharoor)-এর নেতৃত্বে ভারতের চারজন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সুপারিশ

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, বৈঠকে অংশ নেন ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস (Riva Ganguly Das), অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (Jawaharlal Nehru University)–এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ডিন অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু।

সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া ও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা সম্পর্কের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে বাস্তবমুখী কৌশল প্রস্তাব করেন।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব

২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকে সেই সংকট কাটিয়ে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কৌশল নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।

সাংস্কৃতিক কূটনীতির গুরুত্ব

বৈঠকে সংসদ সদস্যরা মত দেন, পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কূটনীতি বা ‘সফট লঞ্চ’ শুরু করা উচিত, যা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাধারণ ভাষা ও সংস্কৃতি—বিশেষত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) এবং নজরুল ইসলামের উত্তরাধিকার—ব্যবহার করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে ২৩ জুন কলকাতা (Kolkata)–তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহ (M. Riaz Hamidullah)–র বৈঠককে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ

বৈঠকে ভারতের সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ‘অবৈধ অভিবাসন’ এবং ১৯ জুন কুনমিং (Kunming)–এ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের নীতিনির্ধারকরা এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পুনঃসংজ্ঞায়িত করতে এবং পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন কৌশল গ্রহণে আগ্রহী।