বিএনপি (BNP) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)-র আমির শফিকুর রহমান (Shafiqur Rahman) ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রোববার (১৩ এপ্রিল) যুক্তরাজ্যের লন্ডন (London) শহরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। এক এগারোর পটপরিবর্তনের পর থেকে একই শহরে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। অন্যদিকে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেলজিয়াম সফর শেষে লন্ডনে পৌঁছান জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা।
সৌজন্য নাকি কৌশলগত?
জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ জানান, “বৈঠকের লক্ষ্য ছিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়া।” তিনি আরও বলেন, “এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে আগামীতে দুই দলের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সাক্ষাৎ নিছক সৌজন্য নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও বহন করতে পারে। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, “দেখতে হবে এর পর দুই দলের মধ্যে তিক্ততা কমে আসে কিনা। সেটাই বৈঠকের প্রভাব নির্ধারণ করবে।”
বিএনপি: ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’
বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা না হলেও দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা এটিকে “শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ” হিসেবে দেখছেন বলে জানান।
পটভূমি: মতভেদ ও বিভাজন
বিগত কয়েক মাসে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মতবিরোধ প্রকট হয়েছে।
– সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন: এই ইস্যুতে দুই দলের অবস্থান বিপরীত।
– গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব: কৃতিত্ব দাবি ও পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে তারা।
– দেশপ্রেম ও আন্দোলনের ভূমিকা: জামায়াত নিজেদের ‘পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি’ দাবি করায় বিএনপির পক্ষ থেকেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এই বৈঠকের পেছনে মতবিরোধ প্রশমনের সম্ভাবনা থাকলেও, সেটা কতটা কার্যকর হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
অতীত সম্পর্ক: ঐক্য ও দূরত্ব
- ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে।
- ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির প্রতীক নিয়ে অংশ নেয়।
- ২০২২ সালে দুই দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দেয়।
- এরপর যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও, নানা ইস্যুতে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগবিহীন মাঠে বিএনপি ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন মামলায় শীর্ষ নেতারা সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, জোট ভাঙা, রাজপথের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং কৌশলগত মতপার্থক্য তাদের সম্পর্ককে নতুন মোড় দিয়েছে।
এমন পটভূমিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহ ও নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।