অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকালের নবম মাসে এসে দেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তাপ ছড়িয়েছে। নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য ও পারস্পরিক দূরত্ব বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে আজ বিএনপি-র একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে।
নির্বাচন ঘিরে জোরালো আলোচনা ও রাজনৈতিক অবস্থান
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অগ্রগতি এবং নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে এখনও সুস্পষ্ট বার্তা না দেওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে।
বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ জানাতে সরকারের প্রতি চাপ বাড়িয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নির্বাচন বিলম্বিত করার সম্ভাবনার বিরোধিতা করে নির্বাচনের স্পষ্ট তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
জামায়াত ও এনসিপির পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়নি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে দলটি। তিনি রাজনৈতিক সহনশীলতার পক্ষে মত দেন।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, তারা সংস্কার ছাড়া ডিসেম্বরেই নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে নন। দলটির নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশন-এর কাছে সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও বিভ্রান্তি
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসেম্বর নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি জোরদার করছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। বিভিন্ন ম্যানুয়াল, ফরম, ব্যালট ইত্যাদি মুদ্রণের বিষয়ে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
উপদেষ্টাদের বক্তব্যে বিতর্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার নিজেকে ‘নির্বাচিত’ দাবি করলেও, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দাবি করেন, ‘মানুষ চায় আমরা পাঁচ বছর থাকি’। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বামপন্থীদের অবস্থান
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি-র সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট-এর সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের দাবি, বিলম্বের যেকোনো প্রচেষ্টা জনগণের দ্বারা প্রতিহত হবে।
উপসংহার
নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এখন দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে শক্ত অবস্থান, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়—এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই সামনে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে এবং নতুন মেরুকরণের আভাসও মিলছে।