শহীদ তালিকায় পুলিশের নাম, আসামির খাতায় বিপ্লবীরা: মামলার অপপ্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের সরকারি তালিকায় বাংলাদেশ পুলিশ-এর পিবিআই-এর এক পরিদর্শকের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যিনি রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় নিহত হন। অথচ তার মৃত্যুর পরপরই নিহতের স্ত্রী খিলগাঁও থানায় মামলা করেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। মামলায় ‘পুলিশ হত্যা’র অভিযোগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও অন্যান্য আন্দোলনকারী ছাত্রদের আসামি করা হয়।

শহীদ তালিকায় পুলিশ, আসামির খাতায় বিপ্লবীরা

সরকারি গেজেটে শহীদের তালিকায় ৮৩৪ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৬ নম্বরে থাকা নিহত পুলিশ পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার নাম বিশেষভাবে আলোচিত। তার স্ত্রী মেরিনা আক্তার বিনা গত বছরের ২৩ জুলাই খিলগাঁও থানায় মামলা করেন, যেখানে ১০০০-১২০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় দাবি করা হয়, কোটা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত দুষ্কৃতকারীরা তাকে হত্যা করে।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, মাসুদ পারভেজ নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন এবং ঘটনার দিন ছুটিতে ছিলেন। বনশ্রী মেইন রোডে ওষুধ আনতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের হাতে নিহত হন।

আইনজীবী ও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর আইনজীবী শেখ ওমর বলেন, “সরকার পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছিল যে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাগুলো নিয়ে কোনো মামলা বা হয়রানি করা হবে না। সেই প্রেক্ষাপটেই এ মামলার অস্তিত্ব উদ্বেগজনক।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এর কর্মী সাকিবুজ্জামান জানান, স্থানীয়ভাবে প্রথম শহীদ তালিকায় নিহত পুলিশ সদস্যের নাম রাখা হয়, যা নিয়ে প্রতিবাদের মুখে নামফলক স্কচটেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তার নাম বাতিলের আবেদন করা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

‘পরিকল্পিতভাবে নাম অন্তর্ভুক্ত’

জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ’ নামক সংগঠনের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান বলেন, “গেজেটে এই নামটি ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলার ভিত্তি তৈরি করা যায়।”

এ বিষয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন-এর এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিষয়টি লিখিতভাবে জানার পরও আমরা অজানা চাপে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।”

তদন্তের বর্তমান অবস্থা

মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। খিলগাঁও থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাউদ হোসেন বলেন, “মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়েছে, তারাই তদন্ত করছে।” তবে পিবিআই কর্মকর্তা হান্নান ফোন কিংবা বার্তায় সাড়া দেননি।

শহীদদের তালিকা ও ট্রাইব্যুনাল তদন্ত

২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেটে শহীদদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে। গেজেট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে ছাত্র, নারী, শিশু এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এক পুলিশ সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই পলাতক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে, যার মধ্যে অভ্যুত্থানে নিহত ৪৫০ বিক্ষোভকারীর ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।