প্রেস সচিব: সাংবাদিকদের হুমকির অভিযোগে ‘মব’ গঠনের পেছনে রয়েছে সাংবাদিকতার ১৬ বছরের ব্যর্থতা

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে বক্তব্য

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বিআইজেএম (BIJEM) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam)। অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক সময়ে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, ‘মব হুমকি’, এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলোর মূল রয়েছে গত ১৫-১৬ বছরের সাংবাদিকতার ব্যর্থতায়।

“হুমকি থাকলে সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিত”

অনুষ্ঠানে ডা. জাহেদ উর রহমান (Zahedur Rahman) প্রশ্ন করেন, যদি সাংবাদিকদের ওপর ‘মব হুমকি’ থাকে এবং তা ক্রিমিনাল অপরাধ হয়, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নেয়নি কেন। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “যদি প্রাণনাশের হুমকি থাকত, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু এ বিষয়টি আরও গভীর, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতা। এড়িয়ে যাওয়ার কিছু নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি যাকে ‘মব’ বলছেন, তারাও প্রতিবাদ করার অধিকার রাখে। যেসব সাংবাদিক নির্দিষ্ট মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা নিয়েই এখন প্রতিবাদ হচ্ছে। সরকার এখানে কী করতে পারে? আমরা প্রথম আলো (Prothom Alo) ও ডেইলি স্টার (Daily Star) অফিসে পুলিশ পাঠিয়েছি, সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেছি, জানতে চেয়েছি তারা অনিরাপদ বোধ করছেন কি না।”

“হুমকি নয়, ব্যর্থতার ফল এই অবস্থা”

শফিকুল আলম বলেন, “আমি নিজেও এক সাংবাদিককে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি অনিরাপদ বোধ করছেন কি না। যদি কোনও মিডিয়া নিরাপত্তার প্রয়োজন মনে করে, আমরা অবশ্যই লোক পাঠাই। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আমরা কোনও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করিনি, কিংবা কোনও নাম উল্লেখ করে কিছু বলিনি।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৬ বছরের সাংবাদিকতা যদি আমরা রিভিউ করতাম, হয়তো আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এখন কেউ মার্চ করছে, কেউ প্রতিবাদ করছে—এই পরিবেশ গড়ে উঠেছে আমাদেরই ব্যর্থতার কারণে।”

“ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা স্বীকার”

সরকারের প্রতি নির্ভর করে নিরাপত্তা পেলে, সেই সরকারকে কি সাংবাদিকরা জবাবদিহির আওতায় আনতে পারবে—এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, “এটা একটা কঠিন প্রশ্ন। আমরা জানি অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা হয়, একজন লোক ক্ষুব্ধ হয়ে ২৬০ জনের নামে মামলা করে দেয়। আমাদের আইনগত কাঠামোতে সেই মামলাগুলো ঠেকানোর ব্যবস্থা নেই। বিচারিক ব্যবস্থার মধ্যেই ‘সর্ষের ভূত’ রয়েছে।”

তিনি জানান, “একজন অধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর, আমরা সারা রাত বসে কাজ করেছি, কেন মামলা হলো তা বোঝার জন্য। পরে জানতে পারি, অভিযোগকারী একজন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, এবং ভিক্টিমকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না।”

“সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি নিয়ে সরকারের অবস্থান”

সাংবাদিকদের চাকরি হারানোর বিষয়েও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের নীতিই হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে কোনও হস্তক্ষেপ না করা। কেউ যদি চাকরি হারায়, এবং সেখানে আমাদের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকে—তাহলে লিখুন আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে স্বাগত জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক চাকরি হারানো তিনজন সাংবাদিকের ঘটনা কেন ঘটল, তা অনুসন্ধান করা উচিত। কারণ সরকার এতে জড়িত নয়।”