২০১৩ সালের ৫ মে তারিখটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক মোড় নেয়। দিগন্ত টেলিভিশন (Diganta Television) বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে থেমে যায় অনেক সাংবাদিকের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পথ। সেই অভিজ্ঞতা স্মৃতিচারণ করেছেন সাংবাদিক জুবায়ের ফয়সাল (Jubayer Faisal)।
অসুস্থতার দিনে পাশে ছিলেন মীর কাসেম আলী
২০১৩ সালের ১ এপ্রিল, গুলশানে বিএনপি (BNP)–র বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতার খবর কাভার করার কথা ছিল সাংবাদিক জুবায়ের ফয়সালের। কিন্তু সেই দিন ভোরে তাঁর জ্বর বেড়ে যাওয়ায় তিনি কাজে যেতে পারেননি। তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ছিলেন, তখনই চমকপ্রদভাবে তাঁকে দেখতে চলে আসেন দিগন্ত টিভির অন্যতম কর্ণধার শহীদ মীর কাসেম আলী (Mir Quasem Ali)।
সাথে ছিলেন ড্রাইভার ও চিকিৎসক ডা. আসিফ রহমান (Dr. Asif Rahman)। রোগ নির্ণয়ের জন্য সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করান, ফলমূল ও ওষুধের ব্যবস্থা করেন এবং প্রায় দেড়ঘণ্টা তার বাসায় সময় কাটিয়ে তাঁর পরিবার ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে খোঁজ নেন।
মীর কাসেম আলী তাঁর বিদায়ের আগে বলেন, “সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে অফিসে যেও না।” এই অভিজ্ঞতা সাংবাদিক জুবায়েরের জীবনে এক গভীর ছাপ ফেলে যায়।
দিগন্ত টেলিভিশনের কালরাত্রি
৫ মে ২০১৩। হেফাজতে ইসলামের ঢাকামুখী অবস্থান ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে জুবায়ের ছিলেন কাঁচপুরে মাঠ রিপোর্টে। সারাদিন সংঘর্ষ কাভার করার পর, রাত ২টার দিকে ক্লান্ত হয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে স্টুডিওতে বিশ্রাম নেন।
রাত ৪টা ২০ মিনিটে তৎকালীন ডিবি (DB)-র ডিসি মোল্লা নজরুল (Molla Nazrul) আসেন, পরিদর্শন করেন এবং নিজের হাতে দিগন্ত টেলিভিশনের সার্ভার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সেই ‘সাময়িক’ শব্দটির মেয়াদ আর শেষ হয়নি।
স্বপ্নভঙ্গ ও বাস্তবতার নির্মমতা
জুবায়ের লিখেছেন, দিগন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো অনেকের পেশাগত ভবিষ্যত। অনেক সাংবাদিক চাকরি হারান, কেউ কেউ ২০ হাজার টাকার চাকরি হারিয়ে ১০ হাজার টাকার প্রস্তাবে বাধ্য হন। অন্যদিকে মিডিয়ার রেসিজম, বৈষম্য এবং লুটেরা আচরণ তখনই চোখে পড়ে সবার।
তিনি বলেন, অন্য গণমাধ্যম মালিকদের সঙ্গে মীর কাসেম আলীর বিশাল পার্থক্য তখনই অনুভব করা যায়। তাঁর মতে, দিগন্ত শুধু একটি টেলিভিশন নয়, এটি ছিলো একটি স্বপ্ন, যা ১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
ফিরে আসার প্রত্যাশা
আজ, ৫ মে ২০২৫—জুবায়ের ফয়সাল বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসে দিগন্তের সেই অপমৃত্যুকে স্মরণ করছেন। তিনি লেখেন, “ফিরে এসো দিগন্ত, আবারো নীল সাদার ভেলায় ভাসো সত্য ও সুন্দরের পক্ষে। শহীদ মীর কাসেম আলীর দেখানো পথে হয়ে ওঠো বাংলার স্বপ্নসারথী।”