কোরবানির হাটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘কালো পাহাড়’, ‘প্রিন্স’ ও ‘লালমানিক’

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশজুড়ে নানা আকর্ষণীয় গরু নিয়ে জমে উঠেছে প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (Brahmanbaria), দিনাজপুর (Dinajpur) ও ফরিদপুর (Faridpur) জেলার তিনটি বিশেষ গরু – ‘কালো পাহাড়’, ‘প্রিন্স’ ও ‘লালমানিক’ – এরই মধ্যে কোরবানির হাটের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘কালো পাহাড়’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তর পৈরতলার দাড়িয়াপুর গ্রামে অবস্থিত মো. মুসলিম মিয়া এগ্রো ফার্ম-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বিশালাকৃতির গরু ‘কালো পাহাড়’। গরুটির ওজন ১ হাজার কেজি, এবং দাম ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা।

খামারটির স্বত্বাধিকারী মো. সুজন মিয়া (Md. Sujon Mia) জানান, এখানে প্রতিটি গরু প্রাকৃতিক খাদ্যে লালন-পালন করা হয় এবং কোনো ইনজেকশন বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।

খামারে রয়েছে মোট ৪৫টি গরু, যার মধ্যে দেশি জাত, শাইওয়াল, ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল-ফ্রিজিয়ান শংকর এবং ইন্ডিয়ান বলদ রয়েছে। ওজনভেদে গরুর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে; ৩৮০–৪৫০ কেজি ওজনের গরুর দাম প্রতি কেজি ৪৯০ টাকা এবং ৫০০–৭০০ কেজির গরুর দাম প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।

সুজন মিয়া বলেন, “আমরা কেবল গরু বিক্রি করি না, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত করি। যারা হালাল ও নিরাপদ পশু খুঁজছেন, তাদের জন্য আমাদের ফার্ম নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হতে পারে।”

দিনাজপুরে ‘প্রিন্স’

দিনাজপুরের সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের মাতাসাগর নিশ্চিন্তপুর বড়দীঘি এলাকায় অবস্থিত ‘কে এস এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম’-এ বড় হয়েছে ‘প্রিন্স’ নামের বিশালাকৃতির হলিস্ট্রিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি। এর ওজন প্রায় ৩০ মণ (১২০০ কেজি) এবং দাম রাখা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

প্রিন্সের মালিক খুশি রহমান (Khushi Rahman) জানান, প্রিন্সের উচ্চতা সাড়ে ৯ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। প্রতিদিন তিনবার গোসল করানো হয় এবং বিশেষ খাদ্যতালিকায় সবুজ ঘাস, ছোলা, খৈল, কুমড়া ইত্যাদি রাখা হয়। খুশি রহমান আরও জানান, খামারটি ২০২০ সালে একটি গরু দিয়ে শুরু করেন, বর্তমানে গরুর সংখ্যা ৩২টি।

তিনি বলেন, “শুধু ব্যবসার জন্য নয়, সন্তানতুল্য প্রিন্সকে ভালোবেসে লালন করেছি। আশা করি, ভালো দামে বিক্রি হবে।”

ফরিদপুরে ‘লালমানিক’

ফরিদপুরের চৌধুরীডাঙ্গী গ্রামের প্রবাস ফেরত যুবক আবুল খায়েরের (Abul Khair) খামারে জন্ম ও বড় হওয়া বিশাল ষাঁড়টির নাম ‘লালমানিক’। ব্রাহমা জাতের বীজ থেকে জন্ম নেওয়া লালমানিকের ওজন বর্তমানে প্রায় ১৮ মণ এবং এর দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

আবুল খায়ের জানান, চার বছর আগে ‘হীরা’ নামক গাভীর গর্ভে জন্ম নেয় লালমানিক। প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালনের কারণে গরুটিকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। তিনি বলেন, “মায়ের ইচ্ছা ছিল গরু পালন করব। তাই একটিমাত্র বাছুর দিয়ে শুরু করেছিলাম। আজ লালমানিকের সাফল্য আমাদের গর্ব।”

সামাজিক মাধ্যমে সাড়া

এই তিন গরুই ইতোমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোরবানির হাটে এই গরুগুলো হবে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ।