‘এন-সার্কেল’ কৌশলে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলছে ভারত: ভূরাজনীতিতে উত্তেজনার নতুন পর্ব

ভারত (India) তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কূটনৈতিক পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘এন-সার্কেল’ (N-Circle)— যেখানে ভারত বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সড়ক, রেল ও জলপথের মাধ্যমে কৌশলগত ঘেরাও তৈরি করছে।

কেএমটিটিপি ও ভারতীয় মহাপরিকল্পনা

কলকাতা-সিত্তে-আইজল করিডোর (KMTTP) প্রকল্পের মাধ্যমে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দরের (Sittwe Port) সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মিজোরামকে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড বাইপাস করে বিকল্প ট্রানজিট রুট তৈরি করছে ভারত। ভারতের মিডিয়া দ্য প্রিন্ট (The Print) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশকে না ঘেঁষে বিকল্প করিডোর তৈরির এই উদ্যোগ ‘জরুরি’ হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের কৌশলগত ভূমিকা ও ইউনূসের বক্তব্য

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) সম্প্রতি চীন সফরে মন্তব্য করেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সমুদ্রবিহীন অঞ্চল, তাদের সমুদ্রে প্রবেশের একমাত্র পথ বাংলাদেশ।” এই বক্তব্যকে ভারতীয় কূটনৈতিক ও মিডিয়ায় ‘উসকানিমূলক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

হাসিনার পদত্যাগের পর কূটনৈতিক শীতলতা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) পদত্যাগ করার পর বাংলাদেশে অন্তঃদলীয় অস্থিরতা এবং ‘জুলাই আন্দোলন’-এর পর ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এর জের ধরে ভারতের সঙ্গে একাধিক স্থলবন্দর ব্যবহার বন্ধ রয়েছে এবং তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা স্থগিত আছে।

ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন

ভারতের সেনা কর্মকর্তা কর্নেল শান্তনু রায় ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, বাংলাদেশের ‘চীনমুখী অবস্থান’ ভারতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তাই বিকল্প কৌশল এবং করিডোর তৈরি এখন সময়ের দাবি।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের অজুহাতে কৌশলগত ঘেরাও

বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে—
পদ্মা সেতু ট্রানজিট প্রকল্প
রংপুর থেকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত ৪ লেন হাইওয়ে
কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট প্রকল্প
কেএমটিটিপি (কলকাতা–সিত্তে–আইজল)

এসব প্রকল্পের সমন্বিত লক্ষ্য হলো ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিকল্প সংযোগ নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশকে বাইপাস করে একক নিয়ন্ত্রণের অবকাঠামো গড়ে তোলা।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি

‘এন-সার্কেল’ নিয়ে অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে এই অবকাঠামোগুলো কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামরিক ঘেরাওয়ের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে— ঠিক যেভাবে ন্যাটো (NATO) ঘিরে রেখেছিল রাশিয়াকে (Russia) এবং শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।