ফার্স্টলেডি বুশরাকে ঘিরেই কি ইমরান ও সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্বের সূচনা?

পাকিস্তান (Pakistan)-এর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan) এবং দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনার সূচনা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল—তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ও বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। অনেক সূত্র এখন একমত যে, এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ইমরানের স্ত্রী ও সাবেক ফার্স্টলেডি বুশরা বিবি (Bushra Bibi)।

দুর্নীতি সন্দেহেই ফাটল শুরু?

দ্য নিউজ ডটকমডটপিকে–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া (General Qamar Javed Bajwa) ইমরান খানের হাতে একটি ফোল্ডার দেন, যেখানে বুশরা বিবি ও তার ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু ইমরান খান স্পষ্ট করে জানান, “বুশরা বিবি আমার রেড লাইন”।

এরপর বাজওয়া এবং আইএসআই (ISI) প্রধান আসিম মুনির (Asim Munir)–এর কাছ থেকে একাধিকবার সতর্কতা পেলেও ইমরান তাদের অভিযোগ আমলে নেননি। বরং মুনিরকে বরখাস্ত করে নিজের পছন্দের জেনারেল ফয়েজ হামিদ (Faiz Hameed)–কে আইএসআই প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন।

বক্তব্যে পরিবর্তন, অবস্থানে দ্বন্দ্ব

২০২৩ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসিম মুনিরকে অপসারণের পেছনে ছিল বুশরা বিবির দুর্নীতির তদন্তের ইচ্ছা। যদিও সে সময় ইমরান তা “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে উড়িয়ে দেন।

কিন্তু ২০২৫ সালে এক্স (সাবেক টুইটার)–এ দেওয়া বার্তায় ইমরান নিজেই স্বীকার করেন, তিনি মুনিরকে বরখাস্ত করেছিলেন এবং পরে বুশরার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন—যদিও মধ্যস্থতাকারীর নাম প্রকাশ করেননি।

বিরোধিতার পর সমর্থন?

দ্বন্দ্বের চার বছর পর, ২০২২ সালের নভেম্বরে ইমরান খান প্রকাশ্যে আসিম মুনিরের সেনাপ্রধান নিয়োগকে সমর্থন করেন। অথচ এর কিছুদিন আগেই তার দল পিটিআই (PTI) ‘লং মার্চ’ চালিয়েছিল সেই নিয়োগ ঠেকাতে।

আইন অনুযায়ী সেনাপ্রধান নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার হলেও, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভি (Dr. Arif Alvi) ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার সম্মতির সংকেত দিয়েছিলেন।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বুশরা বিবির বিষয়ে ইমরান খানের অনমনীয় অবস্থান ছিল সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট। এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে পরবর্তী সব রাজনৈতিক অধ্যায়ে—কারাগার, আদালত, এমনকি সেনা সদর দফতরেও।

অবশেষে প্রশ্ন থেকেই যায়—**ফার্স্টলেডি থেকে শুরু হওয়া এই দ্বন্দ্বই কি পাকিস্তানের রাজনীতির অন্যতম ফল্ট লাইন হয়ে উঠেছে?