শেখ হাসিনার আমলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বিচারপতি এসকে সিনহা: আপিল বিভাগে তুলে ধরা হলো পেছনের কারণ

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা (SK Sinha) কীভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির (Mohammad Shishir Monir)। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আপিল বিভাগ (Appellate Division)ে বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদের নেতৃত্বে মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ শুনানিতে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকার সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে এবং পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।”

‘ব্রোকেন ডিম’ বইয়ে ঘটনা প্রকাশ

শিশির মনির আদালতে জানান, অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সিনহার সঙ্গে সরকারের বিরোধের জের ধরেই তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ‘হেভিয়ার্স কপার্স’ মামলা হয়। মরহুম অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সে সময় আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমাদের প্রধান বিচারপতি কোথায়?”—এর কোনো জবাব রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারেনি। এসব বিষয় এসকে সিনহা তার বই ‘ব্রোকেন ডিম’-এ তুলে ধরেন।

গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ও ডিজিএফআই

জানা গেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ডিজিএফআই (DGFI) এর মাধ্যমে সিনহাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। তার বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এমনকি কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ বা কথা বলার সুযোগও দেওয়া হয়নি।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর থেকেই চাপ

ভিডিও সাক্ষাৎকারে সিনহা জানান, ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি ও বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী (16th Amendment) বাতিল নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বিরোধ শুরু হয় এবং সেটিই চূড়ান্ত সংকটের রূপ নেয়। ডিজিএফআই প্রধান তাকে নিয়মিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে ‘অসুস্থ’ বানিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করেন।

দেশে ফিরতে চান এসকে সিনহা

বিচার বিভাগ ও সংবিধানের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সিনহা দেশে ফিরে আইনি লড়াই চালাতে চান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তিনি দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মাসদার হোসেন মামলার ঐতিহাসিক নির্দেশনা

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর দেওয়া মাসদার হোসেন মামলার (Masdar Hossain Case) রায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল—

  • বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা
  • বিচারকদের চাকরির বিধিমালা নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা
  • নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা বাতিল
  • আলাদা জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠন
  • বাজেট প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণে স্বাধীনতা
  • সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছাড়াই পৃথকীকরণ কার্যকর করা ইত্যাদি

২০০৫ সালেও এই রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।