Tuesday , May 7 2024
Home / opinion / কিশোরীসুলভ হাসির আদুরে কন্যাটিকে দেখতে বড় ভালো লাগে: শাওন

কিশোরীসুলভ হাসির আদুরে কন্যাটিকে দেখতে বড় ভালো লাগে: শাওন

আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। তিনি জন্মগ্রহন করেছেন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তার জন্মদিনকে ঘিরে অসংখ্য মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। এমনকি সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এদিকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন পুরানো একটি ঘটনা তুলে ধরে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ, এক রবিবার সকালে আমাদের বাসায় সাজ সাজ রব পড়ে গেল! বিশালদেহী কিছু আমেরিকান নিরাপত্তারক্ষী তন্নতন্ন করে বাসার আশপাশ দেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করল। তখন আমি থাকি নিউইয়র্কের জ্যামাইকা এলাকায়। পুরো ঠিকানা ১৪৮-০১, ৯০ এভিনিউ, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক ১১৪৩৫। হুমায়ূন আহমেদের কর্কট রোগের সঙ্গে তখন যুদ্ধরত আমাদের পুরো পরিবার। ডাক্তার আর হাসপাতালের বাইরে মাঝে মাঝে বিকেলে ম্যানহাটনে ‘ইস্ট’ নদীর পারে ‘Pier 17’- এ বসে সময় কাটান হুমায়ূন আহমেদ। কেমোথেরাপি চলছিল নিয়মিত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসা নিষেধ। তার উপরে কেমোর প্রভাবে মাথার চুল পড়তে শুরু করেছে। কমে যাওয়া চুল নিয়ে খুব বেশি শংকিত না হলেও আয়নার দিকে তাকিয়ে একটু অস্বস্তিতে ভোগেন হুমায়ূন আহমেদ। অস্বস্তি ঢাকতে একখানা টুপি কিনে নিয়েছেন তিনি। বাড়ির বাইরে গেলে টুপিটা মাথায় দিয়ে বের হন। সেদিনও ব্যস্ত নিরাপত্তা রক্ষীদের দেখে টুপি বের করলেন তিনি। জ্যামাইকার ঐ বাড়ির আশেপাশে অনেক বাঙালির বসবাস। তারা জানালা দিয়ে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে আমাদের বাড়ির কর্মতৎপরতা দেখছেন। আমার বড়পুত্র খানিকটা অবাক—কে আসবে বাসায়! হুমায়ূন উত্তর দিলেন, বাংলাদেশ থেকে ভালোবাসা নিয়ে আসবেন একজন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী শেখ হাসিনা।

সাড়ে চার বছর বয়সী পুত্র নিষাদ কিছু বুঝতে পারল কিনা জানি না। তবে সদ্য এক বছর পূর্ণ হওয়া নিনিত গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে বাবার কোলে চেপে বসল। দুপুর ১২টা নাগাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পৌঁছালেন। তাঁকে স্বাগত জানালেন হুমায়ূন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রী একগুচ্ছ শাদা ফুল তুলে দিলেন হুমায়ূনের হাতে। তারপর ছোট্ট বসার ঘরটিতে বসলেন তিনি। একজন বড়বোনের মতোই হুমায়ূন আহমেদের শারীরিক অবস্থার সব খবরাখবর নিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। হুমায়ূন আহমেদও জানালেন চিকিৎসার সব তথ্য আর চিকিৎসকের মতামত। আমি পাশের চেয়ারে বসে বোকার মতো তাকিয়ে আছি আর অবাক বিস্ময়ে ভাবছি, “ইনিই কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী! তাঁর প্রাণোচ্ছল হাসি, তাঁর মমতাময় দৃষ্টি, কোনোরকম পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছাড়াই দেশের একজন লেখকের দুঃসময়ে তাকে দেখতে যাওয়া! এসব কি কোনো সরকার প্রধানের কাছে কোনোদিন আশা করবার কল্পনা করতে পেরেছি আমরা!”

বাকপটু হুমায়ূন আহমেদ খুব সাধারণ ভঙ্গিমায় কথা বলা এই অসাধারণ মানুষটিকে সামনে পেয়ে কেমন যেন অপ্রভিত, অপ্রস্তুত। জাতিসংঘের অধিবেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে অংশ নিতে আসা ব্যস্ততম একজন রাষ্ট্রপ্রধান নগণ্য এক লেখকের বাড়িতে! “কত জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকেন আপনি। আপনার নিশ্চয় দেরি হয়ে যাচ্ছে!” জবুথবু হুমায়ূন বলে বসেন। কিশোরীসুলভ একটা হাসি খেলে যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখে। মুচকি হেসে বলেন, “আমাকে কি তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলছেন আপনি?” অপ্রস্তুত হুমায়ূন হেসে ফেলেন। প্রায় ৩০ মিনিট থাকলেন তিনি। আমাকে বললেন, যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, যে কোনো বিপদে যেন তাঁকে জানানো হয়। সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। যাওয়ার সময় দশ হাজার ডলারের চেকসহ একটি খাম তুলে দেন হুমায়ূন আহমেদের হাতে। লজ্জায় পড়ে যান হুমায়ূন। তার অস্বস্তি দেখে আমি বলি, “তুমি খামটা হাতে নাও। এখানে আছে তোমার জন্য প্রধানমন্ত্রী আর দেশের মানুষের দোয়া।”

বিনয়ের সঙ্গে চেকটি নেন হুমায়ূন আহমেদ। আমার ছোট্ট দুই পুত্রের মাথায় হাত রেখে আদর করে বিদায় নেন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী।
কোলন সার্জারির আগে ২০১২-এর মে মাসে শেষবারের মতো যখন দেশে এসেছিলেন তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন লেখক নিজে। আমার মা বেগম তহুরা আলী তখন নবম জাতীয় সংসদের একজন সদস্য। তার মাধ্যমে লেখকের আগ্রহের কথা জেনে একদিন বিকেলে নিজ বাসভবনে সময় দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। লেখক এবার স্বপ্রতিভ। মমতাময়ী মানুষটির জন্য সুদূর কলোরাডো থেকে কিনে এনেছেন উপহার—বেগুনি রঙের উজ্জ্বল একটুকরো ‘এমিথিস্ট’ পাথর। পাথরের ওপরের অংশ শক্ত আবরণে ঢাকা। তার ফাঁক দিয়ে ভেতরের বেগুনি আভার উজ্জ্বলতা ঠিকরে বেরোচ্ছে। শুভ্র শাদা শাড়িতে বসার ঘরে এসে মাননীয় নেত্রী যখন ঘরোয়া ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছেন হুমায়ূন সাহেব ?” তখন আর তাঁকে সরকার প্রধান মনে হয় না, পরমাত্মীয়ের মতো লাগে। তাঁর জন্য আনা উপহার হাতে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বললেন, “এই পাথরটা দেখে আমার আপনার কথা মনে হয়েছে। এই পাথরটা যেমন বাইরে অনেক কঠিন কিন্তু আলো পড়লেই ভেতরের ঔজ্জ্বল্য দৃশ্যমান তেমনি চারপাশের কঠিন আবরণ আপনার ভেতরের উজ্জ্বলতাকে আটকে রাখতে পারে না, একটু আলোতেই ঝলমলিয়ে ওঠে।”

তিনি পরম যত্নে উপহার গ্রহণ করলেন। অন্দরমহল থেকে আসা বিভিন্ন ঘরোয়া নাস্তা দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করলেন। কার্পেটে বসে দেড় বছর বয়েসী নিনিতকে নিজ হাতে চিকেন কাটলেট টুকরো করে কেটে খাওয়ালেন! আমি আজও বিস্মিত হয়ে ভাবি—দেশের সর্বোচ্চ আসনে আসীন মানুষটির এ ধরনের সহজ আদুরে ব্যবহারের কথা! ঠিক নিজ নাতি-নাতনির মতোই কোলে তুলে নিয়েছিলেন ছোট্ট নিনিতকে। আর নিষাদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “কি… তুমি নাকি নিউইয়র্কে তোমার জন্য গিফট না নিয়ে যাওয়ায় আমার উপর ‘লাগ’ করেছ! এই নাও তোমার গিফট।” খানিক আগেই ভেতর থেকে একজন সুন্দর কাগজে মোড়ানো তিনটি বাকসো কেন যে নিয়ে এসেছে তা ততক্ষণে বোঝা গেল! হুমায়ূন আহমেদ তার ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ বইটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্যামাইকার বাসায় আগমন নিয়ে ‘তিনি এসেছিলেন’ শিরোনামের একটি কলামে উপহার না পেয়ে নিষাদের ‘লাগ’ করার কথা লিখেছিলেন। তার ফলাফল স্বরূপ আমার দুইপুত্র দুইখানা খেলনার বাকসো উপহার পেল। আচ্ছা ছয় মাস আগে দেখে আসা ছোট্ট একটি বাচ্চার অভিমান (বাচ্চাটির ভাষায় ‘লাগ’) একজন প্রধানমন্ত্রী মনে রাখতে পারেন! সেই বাচ্চার সঙ্গে বাচ্চাদের মতো মিশে গিয়ে প্যাকেট খুলে খেলনা বের করে খেলতে পারেন! বাংলাদেশের রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারেন।

তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জয়ে শিশুদের মতো হাততালি দিয়ে উৎফুল্লতা প্রকাশ করতে পারেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জোরে গলা মেলাতে পারেন! প্রটোকল ভুলে খালি পায়ে কক্সবাজারের সমুদ্রজলে পা ভেজাতে পারেন। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও নাতিকে কোলে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্যানগাড়িতে করে নিজগ্রাম ঘুরে বেড়াতে পারেন। পুত্রের জন্মদিনে এখনো নিজ হাতে পোলাও মাংস রাঁধতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী শেখ হাসিনা—৭৫তম জন্মদিবসে আপনার জন্য অনেক শুভকামনা। আপনার মুখের দিকে তাকালে একজন সফল মাকে দেখা হয়ে যায়, একজন স্নেহময়ী বড়বোনকে দেখা হয়ে যায়। নাতি-নাতনি পরিবেষ্টিত একজন সুখী নানি-দাদিকে দেখা হয়ে যায়। সর্বসাধারণের নেত্রী এবং শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতিবান্ধব একজন রাষ্ট্রপ্রধান দেখা হয়ে যায়। জাতির জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিল যে বাবা, তাঁর গালে কপাল ছোঁয়ানো কিশোরীসুলভ হাসির আদুরে কন্যাটিকে দেখতে বড় ভালো লাগে।

মেহের আফরোজ শাওন বাংলাদেশের সুপরিচিত চেনা মুখ। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি একজন অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী। এছাড়াও তিনি সঙ্গীতশিল্পী, পরিচালক ও স্থপতি। তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু নাটক ও সিনেমায়। তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে জাতীয় পুরষ্কারও অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

About

Check Also

কৃষি ব্যাঙ্ক খালি হচ্ছে, জানি না আপনি এই ব্যাপার এ অবগত আছেন কিনা: আব্দুন নূর তুষার

বর্তমান সময়ে দেশে এক শ্রেনীর বালু খাদকের নাম শোনা যায়। এরা নিজেদের লাভের স্বার্থে ফসলি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

uzaki-chan wa asobitai hentai hentaicity.org hentai dickgirl سكس مصرى نار جديد freetube18x.com الاباحية الحرة start up ph october 4 2022 teleseryena.com david licauco maria clara download porn videos indian creampieporntrends.com myhotmasala tamil office sex videos pimpmpegs.info home sexy video pirnstar hugevids.mobi x videos hd صور حب سكسي porndot.info سكس فلاحات مصريات tamilaunt pornvideox.mobi indian hindi xnxx heroines sex pornmovstube.net hiroen sex @monashiman javmobile.mobi saegusa chitose massage beeg pakistanixxxx.com sex videos x videos xvideo favroite list indian indianxtubes.com www xnxxx sex video com rape sex video in india makato.mobi desi.sex sexy picture dikhaiye video tubefury.mobi anty nude video please be careful with my heart episodes teleseryeepisodes.com 2good 2 be true