রাজধানীর বনানী এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হামলা চালানোর পর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে বিএনপি’র শতশত নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি সমাবেশে শত শত নেতাকর্মী হাজির হন, তাদের হাতে ছিল এবং লাঠি-সোটা। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যিনি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য, তিনি দলের নেতাকর্মীদের আত্মরক্ষার জন্য মোটা বাঁশের লাঠি সোটা নিয়ে রাস্তায় নামার জন্য নির্দেশ দেন।
একই কথা বলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘আমরাও প্রতিটি সমাবেশে লাঠি-রড নিয়ে দাঁড়াব। যেখানে বাধা আসবে, সেখানেই জবাব দেওয়া হবে।’
গত শনিবার ঢাকার বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গু”লিতে দলের তিন নেতাকর্মী নি”হতের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
এর একদিন পর গত সোমবার মহাখালীতে আয়োজিত সমাবেশের দিন থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে বাঁশ ও লাঠি দেখা গেছে। পরদিন গত মঙ্গলবার খিলগাঁওয়ের জোরপুকুর খেলার মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হাতে লাঠি-রড নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
পুলিশের গু”লিতে নূরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন নিহ”ত, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বুধবার মিরপুর-৬ নম্বর সড়কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর (মিরপুর জোন) বিএনপি। গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি। চলতি মাসের ১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির।
মিরপুর-৫ নম্বর সেকশন এ ব্লকের ৫ নম্বর লেনে দুটি ট্রাক একসঙ্গে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশেই বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী বাঁশের লাঠি নিয়ে সভাস্থলে নিয়ে আসছিলেন। এভাবে কয়েকটা বাঁশের লাঠি এনে রাখতে দেখা যায়। এসব বাঁশের মাথায় বাঁধা ছিল বাংলাদেশের পতাকা।
এর কিছুক্ষণ পরই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। আজকে আপনারা পতাকা বাঁধা ছোট ছোট লাঠি নিয়ে এসেছেন। পুলিশ সেই লাঠি নিয়ে নিতে চেয়েছিল। আপনারা দেন নাই। এর পরে মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার বক্তব্যে নেতাকর্মীদের প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনার সরকার যেখানেই ক্ষমতায় থাকুক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে কি কিছু হবে? আজ পতাকা বেঁধে ছোট ছোট লাঠি নিয়ে এসেছেন। পুলিশ সেই লাঠিটি নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তুমি দাওনি তার পর মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
এই নেতা আরও বলেন, সবাইকে নিজেদের রক্ষা করতে হাতে লাঠি রাখতে হবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। যাইহোক, আঘাত করার সময়, আপনাকে পাল্টা আঘাত করতে হবে। ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, বিএনপি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান বলেন, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারা তাদের পছন্দের যে কোন জায়গায় একত্রিত হতে পারবেন। তাদের একটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে তারা কোনো লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু তারা সেই শর্ত মানেননি।
আমান উল্লাহ আমান যিনি ঢাকা মহানগর উত্তরের বিএনপি’র আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন তার সভাপতিত্বে গতকাল অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন যিনি সমাবেশের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন। এই সমাবেশে বিএনপি’র শত শত নেতাকর্মী যোগ দিতে থাকে, বলে জানা যায়। একপর্যায়ে সমাবেশে উপচে পড়া নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়।
